আসামে আসছে ‘লাভ জিহাদ’ ও বহু-বিবাহ বিরোধী আইন

গৌহাটি, ২৩ অক্টোবর: আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ঘোষণা করেছেন যে রাজ্য সরকার আগামী বিধানসভা অধিবেশনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিল আনতে চলেছে—একটি তথাকথিত ‘লাভ জিহাদ’ রোধে এবং অন্যটি বহুবিবাহ (পলিগ্যামি) প্রতিরোধে। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, এই বিলগুলির মূল লক্ষ্য হবে আসামের হিন্দু নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং সমাজে ন্যায়বিচার ও নৈতিক মূল্যবোধ বজায় রাখা।

হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন — “আসামে একবিবাহ প্রথা বজায় রাখাই আমাদের লক্ষ্য”

গৌহাটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন,

“অসমে একবিবাহ প্রথা বজায় রাখা এবং প্রতারণামূলক ধর্মান্তর বন্ধ করাই আমাদের উদ্দেশ্য। নারী সুরক্ষা আমাদের সরকারের অগ্রাধিকার, তাই আমরা আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সামাজিক সংস্কার আনতে চাই।”

তিনি আরও যোগ করেন, রাজ্যের প্রতিটি নারী যেন নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারেন, সেই লক্ষ্যেই সরকার ধারাবাহিকভাবে কাজ করছে।

উত্তর-পূর্বে প্রথম রাজ্য হিসেবে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে অসম

এই বিলগুলি পাশ হলে অসম হবে উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রথম রাজ্য, যেখানে একই সঙ্গে লাভ জিহাদ ও বহুবিবাহের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা কার্যকর হবে। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, আইন দুটির খসড়া ইতিমধ্যেই প্রস্তুত এবং তা আগামী বিধানসভা অধিবেশনে উপস্থাপন করা হবে।

সরকারি কর্মকর্তারা জানান, এই আইন পাশ হলে ধর্মান্তর ও বিবাহ সংক্রান্ত প্রতারণার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি, নারীদের অধিকার সুরক্ষিত রাখার জন্য আলাদা পর্যবেক্ষণ কমিটিও গঠন করা হতে পারে।

ঘোষণার পর থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে নতুন আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষমতাসীন বিজেপি শিবির এই পদক্ষেপকে “নারী সুরক্ষার ঐতিহাসিক পদক্ষেপ” হিসেবে দেখছে। তবে বিরোধী দল কংগ্রেস ও এআইইউডিএফের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করা হয়েছে।

কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, “লাভ জিহাদ” শব্দবন্ধটির কোনও আইনি ভিত্তি নেই এবং এটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে টার্গেট করার রাজনৈতিক প্রচেষ্টা। অন্যদিকে, এআইইউডিএফের দাবি, সরকার এই ধরনের বিল এনে রাজ্যে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করছে।

আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, এই উদ্যোগ সমাজে শৃঙ্খলা আনতে সহায়ক হতে পারে, তবে আইনের ভাষা ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গৌহাটি হাইকোর্টের এক প্রাক্তন বিচারক বলেন,

যদি এই আইন সত্যিই নারী সুরক্ষা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হবে। তবে এর প্রয়োগ যেন কোনও সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক না হয়, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।

উল্লেখযোগ্য যে, মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নেতৃত্বে অসম সরকার এর আগে শিশু বিবাহ রোধে ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে, যার ফলে রাজ্যে শতাধিক গ্রেপ্তার হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় এবার নারী সুরক্ষা ও পারিবারিক নীতির প্রশ্নে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে চলেছে সরকার।

অসম বিধানসভার আগামী অধিবেশন নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হবে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই অধিবেশনেই বিল দুটি উপস্থাপন করা হবে এবং সরকারের পক্ষ থেকে তা দ্রুত পাস করানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এই দুটি বিল পাস হলে, অসম শুধু উত্তর-পূর্ব নয়, বরং গোটা দেশের আইন কাঠামোতেও নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

Leave a Reply