হিন্দু ধর্ম কিভাবে সৃষ্টি হলো? | Origin of Sanatan Dharma

হিন্দু ধর্ম হল— পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ধর্ম। কিন্তু আপনি কি জানেন, হিন্দু ধর্ম কিভাবে সৃষ্টি হলো? বা এটা কবে থেকে শুরু হয়েছিল? বা এই ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা কে? বন্ধুরা আপনি জানলে আবাক হবেন যে হিন্দু ধর্ম কেউ সৃষ্টি করে নি। সত্যি কথা হলো— হিন্দু ধর্মের কোনো শুরু নেই। এটা সৃষ্টির শুরু থেকেই চলে আসছে। তাই তো একে বলা হয়”সনাতন ধর্ম” যার আর্থ — চিরন্তন সত্য।”

আদিকাল থেকে সনাতন ধর্ম

“আমাদের হিন্দু ধর্ম শাস্ত্রে বলা আছে— মহাবিশ্ব সৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথেই ধর্মের জন্ম হয়। যেমন সূর্যোদয় মানেই আলোর জন্ম, তেমনি সৃষ্টির সাথেই ধর্ম বিদ্যমান। তবে ঋষি-মুনিঋষিরা গভীর তপস্যা ও ধ্যানের মাধ্যেমে এই ধর্মের জ্ঞান লাভ করেছিলেন, আর সেই জ্ঞান সংকলিত হয়েছে হিন্দুদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ পবিত্র বেদে। তাইতো বেদকে বলা হয়— ‘অপরুষেয়’ অর্থাৎ মানুষের লেখা নয়, বরং ঈশ্বরপ্রদত্ত জ্ঞান।”

মহাভারতের সময়কাল

“আমাদের ধর্মীয় গ্রন্থ অনুযায়ী মহাভারতের মহাযুদ্ধ হয়েছিল প্রায় ৫,০০০ বছর আগে, খ্রিস্টপূর্ব ৩১০২ সালে। সেই সময় থেকেই কলিযুগের সূচনা হয়। মহাভারত শুধু একটি যুদ্ধের কাহিনি নয়, বরং সত্য-অসত্য, ধর্ম-অধর্মের চিরন্তন লড়াইয়ের প্রতীক। এখানেই আমরা পাই ভগবদ্গীতা, যেখানে শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং ধর্মের সার মানে ধর্মের মূল কথা ব্যাখ্যা করেছেন।” যা গীতায় লিপিবদ্ধ আকারে রয়েছে। এজন্যই আমাদের সবার প্রতিদিন গীতা পাঠ করা উচিত, কারণ গীতাই ধর্মের মূল তত্ত্ব ও জীবনের চূড়ান্ত পথপ্রদর্শক। যা আমাদের সম্পূর্ন জীবন ধারাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

বেদ, উপনিষদ ও দর্শন

হিন্দু ধর্মের মূল ভিত্তি হলো বেদ। বেদের মধ্যে রয়েছে— সৃষ্টির রহস্য, দেব-দেবীর উপাসনা, যজ্ঞ, আচার-আচরণ, আর  ‍পুনাঙ্গ জীবনধারার শিক্ষা। এরপর আসে উপনিষদ, যেখানে বলা হয়েছে— ‘আমরা কারা, জীবনের উদ্দেশ্য কী?’ এখানেই আত্মা (আত্মন) আর পরমাত্মা (ব্রহ্ম)-এর সম্পর্ক বোঝানো হয়েছে। কর্মফল, পুনর্জন্ম আর মোক্ষ— এই ধারণাগুলোই হিন্দু ধর্মকে আধ্যাত্মিক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।”

সনাতন ধর্মের বৈচিত্র্য

“হিন্দু ধর্মের আরেকটি বিশেষ দিক হলো এর বৈচিত্র্য। কেউ শিবকে মানে, কেউবা কৃষ্ণকে, কেউ কেউ ব্রম্মাকে। আবার কেউ গায়ত্রী, কেউ সূর্যকে পূজা করে। তবে এটা মেনে নিতেই হবে সব পথই শেষ পর্যন্ত একই সত্যের দিকে নিয়ে যায়। তাই হিন্দু ধর্মে আছে শৈব, বৈষ্ণব, শাক্ত, স্মার্ত— নানা ধারা, নানা রূপ। কিন্তু মূল শিক্ষা একটাই— সত্য, ধর্ম আর মোক্ষ।”

কেন সনাতন?

“হিন্দু ধর্মকে অন্য ধর্মের মতো ‘তৈরি’ করতে হয়নি। এটা সৃষ্টি থেকেই আছে, তাই এর কোনো শুরু নেই, কোনো শেষও নেই।

তাই একে বলা হয়— সনাতন ধর্ম, অর্থাৎ চিরন্তন পথ। শাস্ত্রে বলা হয়— ‘ধর্মো রক্ষতি রক্ষিতঃ’— অর্থাৎ যে ধর্মকে রক্ষা করে, ধর্মও তাকে রক্ষা করে।”

“তাহলে আমরা বুঝতে পারি— হিন্দু ধর্ম কোনো ৩,০০০ বা ৫,০০০ বছরের ধর্ম নয়, বরং আদিকাল থেকে চলে আসা এক চিরন্তন সত্য। এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ও জীবন্ত ধর্ম। আপনার যদি এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে, তাহলে আপনার শুভাকাঙ্খীদের সাথে শেয়ার করুন।

Leave a Reply