দূর্গাপূজা ২০২৫ | এবং পুজার আসল ইতিহাস

নমষ্কার বন্ধুরা। দূর্গাপূজা ২০২৫ ভাবুন তো—রাতের আকাশে ঢাকের গর্জনে কাঁপছে চারদিক, আলোকসজ্জায় ভরা শহর, আর হাজারো মানুষ একসাথে উচ্চারণ করছে—“জয় মা দুর্গা!” সত্যিই দুর্গাপূজা মানেই আনন্দ, মিলনমেলা আর ভক্তির আবহ। কিন্তু… আপনি কি জানেন এই দুর্গাপূজার আসল ইতিহাস, কিছু চিরন্তন সত্য আর কবে থেকেই শুরু হচ্ছে দুর্গাপূজা ২০২৫? তাছাড়া মা দুর্গা এবছর কীসে আসছেন, এবং কিসে গমন করবেন—সবই জানবো আজকের এই আর্টিকেলে।

দূর্গাপূজা ২০২৫ | এবং পুজার আসল ইতিহাস

দুর্গাপূজা শুধু উৎসব নয়—এটি শুভ শক্তির বিজয়ের প্রতীক। পুরাণ বলে, অসুর মহিষাসুর যখন পৃথিবীতে অন্যায় আর অত্যাচারে ভরিয়ে তুলেছিল অশুভ শক্তি, তখন দেবতাদের সম্মিলিত শক্তিতে জন্ম নিলেন মহামায়া—মা দুর্গা। তিনি মহিষাসুরকে বধ করে শুভ শক্তির জয় ঘোষণা করেন। তাই দুর্গাপূজা মানেই অশুভের বিনাশ আর শুভের জয়।

২০২৫ সালের দুর্গাপূজার সময়সূচী

  • ২১ সেপ্টেম্বর – মহালয়া
  • ২৮ সেপ্টেম্বর – ষষ্ঠী
  • ২৯ সেপ্টেম্বর – মহা সপ্তমী
  • ৩০ সেপ্টেম্বর – মহা অষ্টমী
  • ১ অক্টোবর – মহা নবমী
  • ২ অক্টোবর – বিজয়া দশমী
  • ৮ অক্টোবর – লক্ষ্মী পূজা

এবার আসি চলতি বছরের ক্যালেন্ডারে। ২০২৫ সালে মহালয়া পড়ছে ২১ সেপ্টেম্বর। সেদিনই দেবীপক্ষের সূচনা। ষষ্ঠী থেকে মূল পূজা শুরু হবে ২৮ সেপ্টেম্বর, সপ্তমী ২৯ সেপ্টেম্বর, অষ্টমী ৩০ সেপ্টেম্বর, নবমী ১ অক্টোবর এবং বিজয়া দশমী পড়ছে ২ অক্টোবর। টানা পাঁচদিন ভক্তি, আনন্দ আর মিলনমেলায় ভাসবে কোটি কোটি মানুষ। এবছর মা দুর্গা আসছেন হাতির পিঠে, আর গমন করবেন নৌকায় অর্থাৎ আগমন হবে ঐশ্বর্যের বার্তা নিয়ে, আর গমন হবে শস্য-সমৃদ্ধি ও ঐক্যের প্রতীক হয়ে।

এখন একে একে দেখে নিই প্রতিদিনের তাৎপর্য। ষষ্ঠীর দিন মায়ের বোধন। প্রতিমার চোখে আঁকা হয় প্রাণ, হয় দেবীর আহ্বান। সন্ধ্যায় আদিবাস ও অমলশানান হয়। ঢাকের প্রথম আওয়াজ থেকেই শুরু হয় পূজার আসল আবহ। সপ্তমীতে দেবী দুর্গার নবপত্রিকা গঙ্গার জলে স্নান করানো হয়। ভোরে কাষ্ঠপাত্রে কলাবউ নিয়ে আসা হয় মণ্ডপে। এই দিন থেকেই মায়ের পূজা শুরু হয় পুরোপুরি। অষ্টমী হলো পূজার হৃদয়। ভোর থেকে শুরু হয় অঞ্জলি, মণ্ডপ ভরে ওঠে ভক্তদের ভিড়ে। এই দিনে সন্ধিপূজা হয়, যেখানে মা চণ্ডীর ১০৮ প্রদীপ আর ১০৮ পদ্মে পূজা করা হয়।

অঞ্জলি, ধুনুচি নাচ আর ভক্তিগানে মেতে ওঠে সবাই। নবমী হলো মহিষাসুর বধের প্রতীক। এই দিনে দেবীকে আহ্বান করা হয় বিজয়ের রূপে। পূজা হয় মহাগম্ভীরভাবে, আর রাতে আরতি ও ঢাকের তাল শহর-গ্রাম ভরে তোলে। দশমী মানেই বিদায়ের দিন। সকালে অঞ্জলি দিয়ে মায়ের পূজা শেষ হয়, তারপর হয় সিঁদুর খেলা—যেখানে মায়েরা লাল সিঁদুরে রাঙিয়ে দেন একে অপরকে। বিকেলে হয় প্রতিমা বিসর্জন। চোখে জল আর মুখে হাসি, কারণ সবাই জানে—“আসছে বছর আবার হবে।”

এবার আসা যাক ইতিহাসে। ১৬শ শতকে দুর্গাপূজা শুরু হয়েছিল রাজবাড়ি আর জমিদার বাড়িতে। তখন এটি ছিল অভিজাতদের উৎসব। পরে ১৮শ শতকে সাধারণ মানুষের উদ্যোগে শুরু হয় বারোয়ারি পূজা, যেখানে সমাজের সবাই মিলে পূজা আয়োজন করত। সেখান থেকেই দুর্গাপূজা হয়ে ওঠে সবার উৎসব, সবার আনন্দের উৎসব।

আজ দুর্গাপূজা আর শুধু কলকাতা বা ঢাকা নয়, এটি এক বিশ্বজনীন বাঙালির উৎসব। নিউ ইয়র্ক থেকে লন্ডন, টরন্টো থেকে সিঙ্গাপুর—যেখানেই বাঙালি আছে, সেখানেই মণ্ডপে প্রতিধ্বনি তোলে ঢাকের তালে “জয় মা দুর্গা।”

মা দুর্গার সঙ্গে পূজিত হন তার চার সন্তান—গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী আর সরস্বতী। তারা প্রতীক সৌভাগ্য, সাহস, সম্পদ আর জ্ঞানের। ভোরের অঞ্জলিতে উচ্চারিত হয় পবিত্র মন্ত্র—


মা দূর্গার অঞ্জলি মন্ত্র —

–“যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা, নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।”

এই মন্ত্র ভক্তদের মনে শক্তি, শান্তি ও ভক্তির সঞ্চার করে।


দুর্গাপূজা শুধু আনন্দ নয়, এটি আমাদের শেখায় ঐক্য, ভালোবাসা আর শুভের জয়। প্রতিমা বিসর্জনের মুহূর্তে চোখে জল এলেও মুখে হাসি ফুটে ওঠে—কারণ আমরা জানি, মা আবার আসবেন। তবে মনে রাখতে হবে, পূজা মানে ভক্তি আর শুদ্ধতা। তাই মদ, নেশা, অশালীন নাচ বা বিশৃঙ্খলা—এসব দেবীর অসম্মান এবং সমাজের জন্যও ক্ষতিকর।

অবশেষে যখন ঢাকের তাল, শঙ্খের ধ্বনি আর ধুনুচির নাচ মিলেমিশে আকাশ-পাতাল কাঁপিয়ে তোলে—তখন মনে হয়, দুর্গাপূজা কেবল একটি উৎসব নয়, এটি আমাদের আত্মা, আমাদের পরিচয়। জয় মা দুর্গা!

বন্ধুরা, আপনার শহরে দুর্গাপূজা কেমন হয়? কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে লাইক, শেয়ার আর সাবস্ক্রাইব করুন সনাতন বার্তা। জয় মা দুর্গা!

Leave a Reply