কেন হিন্দু বিয়েতে অগ্নিকে সাক্ষী রাখা হয়?? ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক দিক থেকে তার কারন সমূহ তুলে ধরা হল।
হিন্দু বিয়েতে অগ্নিকে সাক্ষী রাখা হয় ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক কারণে। বৈদিক যুগের তিন প্রধান দেবতার একজন হলেন অগ্নি দেবতা, যিনি মর্ত্যের দেবতা। তাছাড়া অগ্নি দেবতা শুধু পবিত্রতার প্রতীক নন, তিনি দেবতাদের দূত এবং সমস্ত যজ্ঞ ও ধর্মীয় কার্যকলাপের প্রধান সাক্ষী হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। তাই অগ্নির সামনে বিয়ে মানে একজন দেবতাকে সাক্ষী রেখেই বিয়ে করা।
এছাড়াও হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে, যেকোনো যজ্ঞ বা পূজায় অগ্নির মাধ্যমে দেবতাদের আহ্বান করা হয়, কারণ অগ্নি শুদ্ধতার এবং আলোর প্রতীক। বিবাহও একধরনের ধর্মীয় যজ্ঞ, যা নবদম্পতির জীবনকে আলোকিত ও সঠিক পথে পরিচালিত করে।
১. অগ্নির শুদ্ধিকরণ শক্তি:
ঋগ্বেদ (1.1.1)-এ অগ্নিকে “যজ্ঞের প্রধান উপাস্য” এবং “পবিত্রতার প্রতীক” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেহেতু বিবাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় আচার, তাই অগ্নির শুদ্ধিকরণ শক্তির মাধ্যমে এই পবিত্র বন্ধনকে বিশুদ্ধ করা হয়।
২. অগ্নি সাক্ষী ও সত্যের রক্ষক:
যজুর্বেদ (34.5) এবং ঋগ্বেদ-এ বলা হয়েছে, অগ্নি সমস্ত কর্মকাণ্ডের সাক্ষী এবং তিনি সত্যকে রক্ষা করেন। তাই, বিবাহের মতো গুরুতর প্রতিশ্রুতি এবং দাম্পত্য জীবনের দায়িত্ব অগ্নির সামনে গ্রহণ করা হয়, যা সেই প্রতিজ্ঞাকে আরও দৃঢ় এবং ধর্মসম্মত করে তোলে।
৩. গৃহস্থ ধর্মের প্রতীক:
বৈদিক যুগে গৃহস্থদের জন্য অগ্নিহোত্র যজ্ঞ ছিল দৈনন্দিন ধর্মীয় রীতি, যা গার্হস্থ্য জীবনের ধারাবাহিকতা এবং দায়িত্বের প্রতীক। বিবাহ এই গৃহস্থ ধর্মের সূচনা, যেখানে অগ্নি দেবতা ঘরের শুদ্ধতা ও শান্তি বজায় রাখার প্রতীক হিসেবে থাকেন।
৪. সপ্তপদীর গুরুত্ব:
যজুর্বেদ (23.22) অনুযায়ী, বর ও কনে অগ্নিকে কেন্দ্র করে সাতবার ঘোরেন এবং সাতটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করেন। এই সপ্তপদী দম্পতির পারস্পরিক সহানুভূতি, বিশ্বাস, সুখ, শক্তি, প্রজনন, স্বাস্থ্য এবং বন্ধুত্বের ভিত্তি স্থাপন করে। এই প্রতিজ্ঞা অগ্নির সামনে গ্রহণ করার মাধ্যমে বিবাহ বন্ধন স্থায়ী ও আধ্যাত্মিকভাবে বৈধ হয়।
উপসংহার:
অগ্নি দেবতা শুধুমাত্র বিবাহের শুদ্ধতা নিশ্চিত করেন না, বরং তিনি ধর্ম, সত্য এবং দাম্পত্য জীবনের দায়িত্বের প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হন। অগ্নির সামনে এই প্রতিজ্ঞা বিবাহ বন্ধনকে শুধু সামাজিক বা আইনি নয় দিক থেকে নয়, আধ্যাত্মিকভাবেও চিরস্থায়ী ও বৈধ করে তোলে।