পূজা কি?
পূজা শব্দটি এসেছে সংস্কৃত “পূজ” ধাতু থেকে, যার অর্থ হলো “আরাধনা করা” বা “পবিত্রভাবে সম্মান জানানো”। এটি হিন্দু ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ আচার, যেখানে ভক্তরা তাদের আরাধ্য দেব-দেবীদের প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পূজার মাধ্যমে ভক্তরা ঈশ্বরের কৃপা প্রার্থনা করেন এবং জীবনের সাফল্য, সুখ ও শান্তি কামনা করেন।
২০২৫ সালের পূজা পার্বণের সময়সূচি ও বিবরণ
১. সরস্বতী পূজা (৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫)
সরস্বতী পূজা বিদ্যার দেবী সরস্বতীকে উৎসর্গ করা হয়। শিক্ষার্থীরা এদিন দেবীর কাছে বিদ্যা, বুদ্ধি ও জ্ঞানের জন্য প্রার্থনা করে। দেবী সরস্বতীর মূর্তি সাজিয়ে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া হয়।
২. শিবরাত্রি (২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫)
শিবরাত্রি মহাদেব শিবের আরাধনার একটি বিশেষ রাত। ভক্তরা এদিন উপবাস করে এবং শিবলিঙ্গে দুধ, বেলপাতা ও গঙ্গাজল নিবেদন করেন। এই পূজার মাধ্যমে শিবের কৃপা লাভের আশা করা হয়।
৩. দোলযাত্রা (১৪ মার্চ ২০২৫)
দোলযাত্রা হল রঙের উৎসব, যা শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার প্রতি উৎসর্গ করা হয়। এই দিন ভক্তরা একে অপরকে রঙ মাখিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন এবং শ্রীকৃষ্ণের ভক্তিমূলক গান গেয়ে উৎসব পালন করেন।
৪. বাসন্তী পূজা (৪ এপ্রিল ২০২৫)
বাসন্তী পূজা দেবী দুর্গার আরাধনা, যা সাধারণত চৈত্র মাসে পালিত হয়। এই পূজার মাধ্যমে মা দুর্গার আশীর্বাদ কামনা করা হয়। এটি বাংলার অন্যতম প্রধান পূজা।
৫. রাম নবমী (৬ এপ্রিল ২০২৫)
রাম নবমী ভগবান রামের জন্মদিন। এই দিন ভক্তরা রামচন্দ্রের জীবনী পাঠ করেন এবং ভক্তিমূলক সংগীতের মাধ্যমে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
৬. হনুমান জয়ন্তী (১২ এপ্রিল ২০২৫)
এই দিন হনুমানজির জন্মবার্ষিকী হিসেবে পালিত হয়। ভক্তরা হনুমান চালিসা পাঠ করেন এবং হনুমান মন্দিরে পূজা করেন।
৭. চড়ক পূজা (১৪ এপ্রিল ২০২৫)
চড়ক পূজা হলো শিবের প্রতি ভক্তদের এক বিশেষ উপাসনা। এই দিন ভক্তরা বিভিন্ন শারীরিক কসরতের মাধ্যমে শিবের প্রতি তাদের ভক্তি প্রকাশ করেন।
৮. পহেলা বৈশাখ (১৫ এপ্রিল ২০২৫)
পহেলা বৈশাখ হলো বাংলা নববর্ষের দিন। এই দিন হিন্দু সম্প্রদায় মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে নতুন বছরের সূচনা করে।
৯. অক্ষয় তৃতীয়া (৩০ এপ্রিল ২০২৫)
অক্ষয় তৃতীয়া হল একটি শুভ দিন, যা দেবী লক্ষ্মী এবং ভগবান বিষ্ণুর পূজার জন্য পরিচিত। এই দিন দান-ধর্ম করাকে অত্যন্ত পুণ্যময় বলে মনে করা হয়।
১০. লোকনাথ তিরোধান (৩ জুন ২০২৫)
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর তিরোধান দিবস। ভক্তরা এদিন তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রার্থনা করেন।
১১. রথযাত্রা ও উল্টো রথযাত্রা (২৭ জুন থেকে ৫ জুলাই ২০২৫)
রথযাত্রা ভগবান জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার প্রতি উৎসর্গিত। এই উৎসবে তাদের মূর্তি রথে করে মন্দির থেকে বের করা হয়। উল্টো রথযাত্রা হল তাদের পুনরায় মন্দিরে ফেরানোর দিন।
১২. ঝুলনযাত্রা (৪ আগস্ট ২০২৫)
ঝুলনযাত্রা শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার প্রতি উৎসর্গিত একটি উৎসব। ভক্তরা এদিন মন্দিরে দোলনায় সজ্জিত শ্রীকৃষ্ণের মূর্তি দোল দেন।
১৩. রাখি পূর্ণিমা (৯ আগস্ট ২০২৫)
রাখি পূর্ণিমা ভাই-বোনের সম্পর্কের উৎসব। বোনেরা ভাইদের হাতে রাখি বেঁধে তাদের মঙ্গল কামনা করেন।
১৪. জন্মাষ্টমী (১৬ আগস্ট ২০২৫)
জন্মাষ্টমী শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন। ভক্তরা এদিন উপবাস করেন এবং শ্রীকৃষ্ণের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো স্মরণ করেন।
১৫. মনসা পূজা (১৭ আগস্ট ২০২৫)
মনসা পূজা দেবী মনসার প্রতি উৎসর্গিত, যাকে সাপের দেবী বলা হয়। বিশেষত গ্রামবাংলায় এটি জনপ্রিয়।
১৬. গণেশ পূজা (২৭ আগস্ট ২০২৫)
গণেশ পূজা সিদ্ধিদাতা গণেশের প্রতি উৎসর্গিত। ভক্তরা গণেশের মূর্তি স্থাপন করে মঙ্গল কামনা করেন।
১৭. বিশ্বকর্মা পূজা (১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫)
বিশ্বকর্মা পূজা কারিগর ও শিল্পীদের উৎসব। তারা বিশ্বকর্মার কাছে তাদের কাজের উন্নতির জন্য প্রার্থনা করেন।
১৮. মহালয়া (২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫)
মহালয়া হলো পিতৃপক্ষের শেষ দিন। এই দিন পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় এবং শারদীয়া দুর্গোৎসবের সূচনা হয়।
১৯. শারদীয় দুর্গোৎসব (২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর ২০২৫)
দুর্গোৎসব দেবী দুর্গার আরাধনার প্রধান উৎসব। এটি বাঙালিদের সবচেয়ে বড় উৎসব।
২০. লক্ষ্মীপূজা (৬ অক্টোবর ২০২৫)
লক্ষ্মীপূজা দেবী লক্ষ্মীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পালিত হয়। ভক্তরা এদিন ঘরের সমৃদ্ধি কামনা করেন।
২১. কালীপূজা (২০ অক্টোবর ২০২৫)
কালীপূজা দেবী কালীর আরাধনার জন্য পরিচিত। এটি আলো ও শক্তির উৎসব।
২২. ছট পূজা (২৭ অক্টোবর ২০২৫)
ছট পূজা সূর্য দেবতার প্রতি ভক্তি নিবেদনের জন্য পালন করা হয়। ভক্তরা গঙ্গার ঘাটে উপবাস করে সূর্যকে আরাধনা করেন।
২৩. জগদ্ধাত্রী পূজা (৩০ অক্টোবর ২০২৫)
জগদ্ধাত্রী পূজা দেবী জগদ্ধাত্রীকে উৎসর্গিত। এটি দুর্গাপূজার পর পালিত হয়।
২৪. রাসযাত্রা (৪ নভেম্বর ২০২৫)
রাসযাত্রা শ্রীকৃষ্ণের প্রতি উৎসর্গিত। এই দিন ভক্তরা ভগবানের রাসলীলার স্মরণে পূজা করেন।
**২৫. কার্তিক পূজা (১৭ নভেম্বর ২০২৫) **
কার্তিক পূজা দেবতা কার্তিকের আরাধনার জন্য পরিচিত। বিশেষত শিশুদের সুস্বাস্থ্যের জন্য এই পূজা করা হয়।
উপসংহার
উপরোক্ত পূজা পার্বণগুলো সনাতন ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ আচার-অনুষ্ঠান। এসব উৎসব ভক্তি, আনন্দ এবং সম্প্রীতির বার্তা বহন করে। ২০২৫ সালে প্রতিটি পূজার নির্ধারিত দিনে তা পালনের মাধ্যমে আমরা নিজেদের মধ্যে ধর্মীয় ঐক্য এবং মানবিক সম্প্রীতি বাড়াতে পারি।